পিতামহ


৫২৩ পৃষ্ঠার বিশাল বই শেষ করে মনে হলো, আহা এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো! শেষটায় বড় তাড়াহুড়ো ছিলো...কি হতো আরো আট বছরের বর্ণনা থাকলে...না না, শুধু আট বছর কেন? বইটা আরো অনেক বড় হওয়া দরকার ছিলো! শেষেই যে নতুন শুরুর গল্প! সে গল্প শোনার তৃষ্ণা বুকে নিয়ে বইটা রেখে দিতে হলো! সে গল্প যদিও বারবার শোনা...পড়া...তবুও! এই বইয়ের চরিত্রদের তাঁর সাথে দেখা হওয়ার গল্প জানার আফসোসটা থেকেই গেলো! লেখক কি কখনো আবার সে গল্প লিখবেন? খুব করে চাই, লিখুন!

 

এক মাথা সাদা চুল নিয়ে শিশুটির জন্ম হয়েছিল বলে মা নাম রেখেছিলেন শাইবা (সাদা চুলের অধিকারী)! কালের বিবর্তনে অবশ্য সে নাম টিকেনি। জন্মেই যিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আর সবার চেয়ে আলাদা, তাঁর জীবনের গল্প মুগ্ধ হয়ে পড়ার মতো, কখনও বিষ্ময়ে স্তব্ধ হওয়ার মতো, শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসার মতো! ইনি আমাদের সবার খুব পরিচিত, ইতিহাসের এক কিংবদন্তি চরিত্র আবদুল মোত্তালিব। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী পড়তে বা শুনতে গিয়ে বারবার তাঁর পিতামহের নাম পেয়েছি আমরা। মক্কায় তাঁর কিংবদন্তিতূল্য জনপ্রিয়তার কথা সবারই জানা! সীরাহ শুনতে গিয়ে আমার নিজেরও বিভিন্ন সময় কৌতূহল জন্মেছে, কিন্তু ভাবিনি এতোকিছুও জানার ছিলো! পড়ে ফেলে মনে হলো, ইতিহাসের এই চমৎকার চরিত্র নিয়ে আগে কেন কেউ বই লিখলো না! এই বইটাও না লিখা হলে কতো অপূর্ণতা থেকে যেতো! লেখককে ধন্যবাদ জানাই বইটির জন্য। 

 

মূল চরিত্রের পাশাপাশি আরো অনেকগুলো চরিত্র মন কেড়েছে! তালহা, কায়েস, সাফিয়া, হুমায়রা, মায়মুনা, হামামা চরিত্রগুলোকে ভালোবেসে ফেলেছি। 

 

এ কয়েকদিন কখনো ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম জাহেলিয়া যুগের মক্কায়, কখনো ইয়েমেনের সবুজ শ্যামলিমায়, কখনো মরূদ্যানে! লেখকের বর্ণনার শক্তিতে মনের চোখে সত্যিই দেখতে পাচ্ছিলাম সেই তপ্ত মরুভূমি কিংবা ইয়াসরিব, ইয়েমেনের সবুজ প্রকৃতি কিংবা এডেনের সমুদ্রবন্দর, আবার কখনো সাওয়ারী পিঠে উটের দুলকি চলা বা বালির ঝড় উড়িয়ে ঘোড়ার পিঠে ছুটে চলা কোনো তরুণকে! শেষ করেও ঘোর কাটেনি তাই!

 

একটা কথা না বললে অনেক কিছু বলা হবেনা....কোনো বইয়ের বিষয় বা কাহিনী যতই ভালো হোক না কেন লেখকের লেখার ভাষা বা বর্ণনাভঙ্গি পছন্দ না হলে ঐ বই আমি বেশিদূর পড়তে পারিনা। এটা হয়তো পাঠক হিসেবে আমার সীমাবদ্ধতা। এ কারণে অনেক জনপ্রিয় বইও আমি পড়তে পারিনি। এ বইটিতে লেখক যেভাবে ইতিহাসের বর্ণনা দিয়েছেন, তা বেশ ভালো লেগেছে। লেখকের আরো বই পড়ার ইচ্ছে রইলো! আর পাঠক হিসেবে লেখককে একটা অনুরোধ করার লোভ সামলাতে পারছি না! সম্ভব হলে সীরাহ লিখুন! সেখানে আবদুল মোত্তালিবের শেষ সময়ের বর্ণনা থাকুক...তালহা, সাফিয়া, হামিমা এদের সাথে শেষনবীর দেখা হয়েছিল কি? দেখা হলে সে গল্পটা আপনার বইয়ে থাকুক!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্টিকেল খুঁজুন